সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক তান্ত্রিক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর গল্প

বৌদ্ধধর্ম বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম এবং এই ধর্মের অনুসারী সংখ্যা ৫২০ কোটির বেশি, বৌদ্ধধর্ম মূলত সিদ্ধার্থ গৌতমের মৌলিক শিক্ষা ও এর ব্যাখ্যাকৃত দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই ধর্ম খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ ও ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রাচীন ভারতে উৎপত্তিলাভ করে এবং এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বৌদ্ধধর্মের তিনটি প্রধান বিদ্যমান শাখা সাধারণত পণ্ডিতদের দ্বারা স্বীকৃত যথা: থেরবাদ বা হীনযান, মহাযান ও বজ্রযান তবে বৌদ্ধ চিন্তাধারাগুলোতে  মোক্ষলাভের উপায়ের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের আপেক্ষিক গুরুত্ব ও ধর্মসম্মতি এবং  নির্দিষ্ট শিক্ষা ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। গৌতম বুদ্ধের চার আর্যসত্য অনুসারে বৌদ্ধধর্মের লক্ষ্য হল তৃষ্ণা বা আসক্তি ও অবিদ্যার ফলে উদ্ভূত দুঃখ কে নিরসন করা। তবে আজকে আমরা গৌতম বুদ্ধকে নয়, আলোচনা করব অতীশ দীপঙ্কর কে নিয়ে।
যুগ শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ পণ্ডিত এবং দার্শনিকের মধ্যে অন্যতম অতীশ দীপঙ্কর, কল্যাণশ্রী ও প্রভাবতী দেবীর পুত্র, পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুর জেলার অন্তর্গত বজ্রযোগিনী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্ম ও মৃত্যু তারিখ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ বৌদ্ধ পণ্ডিতের মতে তিনি 980 খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশবের নাম ছিল চন্দ্রগর্ভ। তিনি প্রাথমিকভাবে একজন আধ্যাত্বিক মানুষ ছিলেন এবং পরবর্তী জীবনে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। দীপঙ্কর বজ্রাসন বিহারে যাওয়ার আগে তার মায়ের কাছে প্রাথমিক পড়াশোনা সমাপ্ত করেছিলেন। তিনি বৌদ্ধ পণ্ডিত জেতারীর অধীনে বৌদ্ধধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। পরবর্তী সময় তিনি সকল পার্থিব বন্ধন ত্যাগ করে, গুহ্য জ্ঞান অর্জনের জন্য তাঁর পরিবার ত্যাগ করে উত্তর ভারতে যাত্রা করেন এবং রাহুল গুপ্তের শিষ্য হন। বৌদ্ধ রহস্যবাদের জ্ঞান অর্জনের পর তিনি গুহ্যজ্ঞানবজ্র উপাধি লাভ করেন। মগধের ওদন্তপুরী বিহারের চ্যান্সেলর ও বিশিষ্ট উপদেষ্টা আচার্য শীলরক্ষিতের দ্বারা বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পর তাঁর নামকরণ হয়েছিল দীপঙ্কর সৃজন। অতীশের বয়স যখন একত্রিশ, তখন আচার্য ধর্মরক্ষিত তাকে ভিক্ষুদের সর্বোচ্চ পদে উন্নীত করেছিলেন।

ঐতিহাসিকদের মতে ১০১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যভাগে, দীপঙ্কর, ১০০ টিরও বেশি শিষ্যের সাথে সুবর্ণদ্বীপে (আধুনিক মালয়েশিয়া) গিয়েছিলেন এবং আচার্য চন্দ্রকীর্তীর শিষ্য হন, যার অধীনে তিনি বারো বছর ধরে বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন শাখা অধ্যয়ন করেন। তারপর তিনি মগধে ফিরে আসেন যেখানে তিনি মহান বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সাথে সাক্ষাত করেন যারা সকলেই তাঁর উচ্চতর জ্ঞান এবং পাণ্ডিত্যকে স্বীকার করেন। পাল রাজা মহিপাল তাকে বিহারের ভাগলপুরে বিক্রমশীলা মহাবিহারের চ্যান্সেলর নিযুক্ত করেন এবং ধীরে ধীরে দীপঙ্কর শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। মনে করা হয় এখানে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, দীপঙ্কর প্রায় ১৫ বছর ধরে ওদন্তপুরী ও সোমপুর বিহারের অধ্যাপক ও চ্যান্সেলর ছিলেন। সোমপুর মহাবিহারে অবস্থানকালে তিনি মধ্যমকরত্নপ্রদীপ অনুবাদ করেন। এইসময় মহীপালের পুত্র নয়পাল এবং কালাচুড়ির রাজা লক্ষ্মীকর্ণের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দীপঙ্করের মধ্যস্থতা শত্রুতা বন্ধ করতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল। যুদ্ধের কিছুদিন পরে, তিব্বতের বৌদ্ধ রাজা, লা লামা ইয়োসি হোদ (লাহ লামা-ই-শেস) দীপঙ্করকে বুদ্ধের বাণী প্রচারের জন্য তিব্বতে আমন্ত্রণ জানান। মহান সম্মানের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, দীপঙ্কর প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। রাজা লা লামার মৃত্যুর পর, চ্যাং চুব (চ্যান-চব) জ্ঞানপ্রভা তিব্বতের রাজা হন এবং তিনি পুরানো আমন্ত্রণটি নবায়ন করেন। এবার দীপঙ্কর প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং কয়েকজন বিশিষ্ট পণ্ডিতের সাথে ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতে যাত্রা শুরু করেন। পথে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। নেপালে, রাজা অনন্তকীর্তি দীপঙ্করকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, যিনি খনা বিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং নেপালের রাজকুমার পদ্মপ্রভাকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন।

ইতিহাস বলে, রাজা চ্যাং চুব দীপঙ্করকে তিব্বতে স্বাগত জানাতে রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন। একজন শিল্পীর এই অভ্যর্থনার চিত্র এখনও সেখানে একটি বৌদ্ধ বিহারের দেয়ালে দেখা যেতে পারে। দীপঙ্করের সম্মানে রাগদুনা নামে একটি বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবিত হয়েছিল। থো-লিং বিহারকে তাঁর সদর দফতরে পরিণত করা হয়, দীপঙ্কর বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য সমগ্র তিব্বত ভ্রমণ করেছিলেন, সেই সময় তাঁর প্রধান শীর্ষ হিসাবে ছিলেন ডমটন ক-দম পা।

তিব্বতিরা দীপঙ্করকে শ্রদ্ধা করে, তাকে গৌতম বুদ্ধের পরে দ্বিতীয় স্থান দেয় এবং তাকে জোবো চেনপো (একজন মহান দেবতা) বলে উল্লেখ করে। তিব্বতের লামারা, যারা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তারা দীপঙ্করের শিষ্য এবং উত্তরাধিকারী হিসাবে পরিচিত হতে পেরে গর্বিত বোধ করেন। তিব্বতের ধর্ম ও সংস্কৃতিতে এখনও দীপঙ্করের প্রভাব অনুভূত হয়। তবে কারজ্যু পা, শাক্য পা, দুক পা, প্রভালতী দশটি সম্প্রদায় অফিসের সংস্কারগুলির অর্ধেক অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু যাঁরা অতীশের সংস্কার গ্রহণ করেননি এবং প্রাচীন মত ও বনধর্মের আচার ব্যবহার পোষণ করেন তাদের সম্প্রদায়ের নাম হলো নিমমা পা। এই সময় তাদের সাতটি শাখা সম্প্রদায় স্থাপিত হয়েছিল, এই সকল সম্প্রদায়ের লামারা লাল রঙের টুপি এবং চোগা পরিধান করেন। তাদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন মত তিব্বতের বিভিন্ন স্থানে আজও প্রতিষ্ঠিত আছে।

অতীশ দীপঙ্কর দুই শতাধিক বই লিখেছেন, অনুবাদ করেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন, যা তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে সাহায্য করেছে। তিনি তিব্বতে বেশ কিছু সংস্কৃত পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেন এবং সেগুলি নিজেই কপি করেন। তিনি সংস্কৃত থেকে ভোটে (তিব্বতি ভাষায়) বহু বই অনুবাদ করেন। বিশেষ করে তাঁর ভোটে বৌদ্ধ শাস্ত্র, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যার উপর অনেক লেখা রয়েছে। দীপঙ্কর সংস্কৃতে বেশ কিছু বই লিখেছিলেন, তবে এখন কেবল তাদের তিব্বতি অনুবাদ গুলিই বিদ্যমান। যার মধ্যে তার 79টি বই তিব্বতি অনুবাদে সংরক্ষিত আছে। তার মধ্যে নিম্নলিখিত কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য নাম তুলে ধরলাম, ১) বোধিপথপ্রদীপ ২) চর্যা সংগ্রহপ্রদীপ ৩) শরণাগতদেশ ৪) কর্মবিভঙ্গ ৫) গুহ্যক্রিয়াকর্ম ৬) ভোধীপাঠপ্রদীপ, ৭) চর্যাসংগ্রহপ্রদীপ, ৮) সত্যদ্বয়বতার, ৯)‌ বোধিসত্ত্বমন্যাবলী, ১০) মধ্যমকরত্নপ্রদীপ, ১১) মহাযানপাঠসাধনসংগ্রহ, ১২) শিক্ষাসমুচ্চয় অভিসাম্য, ১৩) প্রজ্বপারমিতাপিন্ডার্থপ্রদীপ, ১৪) একবীরসাধনা পত্র, ১৫) বিভিরসাধনা প্রভৃতি, তাছাড়া চর্যাসম্গ্রহপ্রদীপে দীপঙ্কর রচিত কিছু কীর্তন পদ রয়েছে।

তিব্বতে প্রায় তেরো বছর থাকার পর, দীপঙ্কর ১০৫৩ খ্রিষ্টাব্দে লাসার কাছে লেথান নামক একটি গ্রামে ৭৩ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন। লেথানে তাঁর শেষকৃত্যের স্থানটি একটি মন্দিরে পরিণত হয়েছে। ২৮ শে জুন ১৯৭৮ সালে তাঁর চিতাভস্ম বাংলাদেশের ঢাকার ধর্মরাজিকা বৌদ্ধ বিহারে রাখা হয়। তাঁর জন্মস্থান, বজ্রযোগিনী, এখনও নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা নামে পরিচিত কারণ তিনি পরমাত্মাতে বিশ্বাসী ছিলেন।

TRANSLATE 



Buddhism is the fourth-largest religion in the world, with over 520 million followers. It is primarily based on the fundamental teachings and philosophical interpretations of Siddhartha Gautama. The religion originated in ancient India between the 6th and 4th centuries BCE and later spread across most of Asia. Scholars generally recognize three major branches of Buddhism: Theravāda (Hinayana), Mahāyāna, and Vajrayāna. However, Buddhist thought varies in interpretations of the path to enlightenment, the significance of different scriptures, and specific teachings and practices. According to Gautama Buddha’s Four Noble Truths, the ultimate goal of Buddhism is to eliminate suffering, which arises from craving and ignorance. Today, however, we will not discuss Gautama Buddha but rather focus on Atīśa Dīpaṅkara. Atīśa Dīpaṅkara was one of the greatest Buddhist scholars and philosophers of his time. He was the son of Kalyanashri and Prabhavati Devi and was born in the village of Vajrayogini in the Vikrampur district of eastern Bengal. There is considerable debate regarding his birth and death dates, but most Buddhist scholars believe he was born in 980 CE. His childhood name was Chandragarbha. He was a deeply spiritual person from an early age and later embraced Buddhism. Before traveling to Vajrāsana Monastery, Dīpaṅkara completed his primary education under his mother’s guidance. He studied Buddhism and Buddhist scriptures under the renowned Buddhist scholar Jetari. Later, he renounced all worldly attachments and embarked on a journey to northern India to gain esoteric knowledge, becoming a disciple of Rahul Gupta. After mastering Buddhist mysticism, he earned the title of "Guhyajñānavajra." Upon receiving ordination into Buddhism from Acharya Shilarakshita, the Chancellor and distinguished advisor of Odantapuri Monastery in Magadha, he was given the name Dīpaṅkara Srījñāna. At the age of thirty-one, Acharya Dharmarakshita elevated him to the highest rank of the Buddhist monastic order. According to historians, around 1011 CE, Dīpaṅkara, along with more than 100 disciples, traveled to Suvarnadvipa (modern-day Malaysia), where he became a disciple of Acharya Chandrakirti. He studied various branches of Buddhism under him for twelve years. After returning to Magadha, he met prominent Buddhist scholars, who acknowledged his profound knowledge and scholarly excellence. Pala King Mahipala appointed him as the Chancellor of Vikramashila Monastery in Bihar. Gradually, Dīpaṅkara gained immense fame as a preeminent scholar. It is believed that alongside his administrative duties, he also served as a professor and Chancellor at Odantapuri and Somapura Monasteries for about fifteen years. While residing at Somapura Mahavihara, he translated the Madhyamakaratnapradīpa. During this time, a war broke out between Mahipala’s son Nayapala and the Kalachuri king Lakshmikarna. Dīpaṅkara played a crucial role in mediating peace between the two sides. Sometime after the war, the Buddhist king of Tibet, La Lama Yosi Hod (Lha Lama Yeshe), invited Dīpaṅkara to Tibet to propagate Buddha’s teachings. Despite being offered great honor, he initially declined the invitation. After La Lama’s death, King Changchub Gyalpo (Jangchub Gyalpo) renewed the invitation. This time, Dīpaṅkara accepted the proposal and embarked on his journey to Tibet in 1040 CE with several esteemed scholars. Along the way, he received a warm reception. In Nepal, King Anantakirti welcomed him and established Khona Monastery, where he initiated Nepalese Prince Padmaprabha into Buddhism.

Historical accounts state that King Changchub Gyalpo hosted a grand royal reception for Dīpaṅkara upon his arrival in Tibet. A painting depicting this event still exists on the walls of a Buddhist monastery in Tibet. In his honor, the Ragduna, a musical instrument, was invented. Tho-ling Monastery became his headquarters, from where he traveled across Tibet to spread Buddhism. His principal disciple at the time was Dromton Ka-dam-pa.

The Tibetans deeply revere Dīpaṅkara, ranking him second only to Gautama Buddha, and refer to him as Jowo Chenpo (a great deity). Tibetan Lamas, who hold both political and religious authority, take pride in being considered Dīpaṅkara’s disciples and successors. His influence can still be felt in Tibetan religion and culture. However, several Buddhist sects, such as Kargyu-pa, Shakya-pa, and Druk-pa, participated in religious reforms under his guidance. Those who did not accept Atīśa’s reforms and continued practicing ancient Buddhist traditions and Bon rituals formed a sect known as Nyingma-pa. During this time, seven distinct sub-sects emerged, whose monks wore red hats and robes. Their teachings continue to be practiced in different regions of Tibet. Atīśa Dīpaṅkara wrote, translated, and edited over two hundred books, significantly contributing to the spread of Buddhism in Tibet. He discovered and copied numerous Sanskrit manuscripts in Tibet, translating many into the Tibetan language. His writings cover Buddhist scriptures, medical science, and technology. While he originally wrote several books in Sanskrit, only their Tibetan translations have survived. Among his works, 79 Tibetan-translated books remain preserved. Some of his most notable works include Bodhipathapradīpa,Caryāsaṅgrahapradīpa,Śaraṇāgatadeśa,Karmavibhaṅga, etc. His Caryāsaṅgrahapradīpa includes several devotional songs (Kīrtan) composed by him. After spending about thirteen years in Tibet, Atīśa Dīpaṅkara passed away in 1053 CE at the age of 73 in a village called Lethan, near Lhasa. The site of his cremation was later transformed into a temple. On June 28, 1978, his relics were brought to the Dharmarajika Buddhist Monastery in Dhaka, Bangladesh. His birthplace, Vajrayogini, is still known as "Nastik Panditer Bhita" (the home of the atheist scholar) because he did not believe in a supreme deity.

Written by:-  KALCHAKRA 

আরো পড়ুন 

১. পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া গ্রন্থাগারের ইতিহাস

২. মধ্যযুগের ডুকাটের গল্প

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মধ্যযুগে বাণিজ্যে ডুকাটের কাহিনী

মুদ্রা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের নেশা বহু মানুষেরই রয়েছে। সেই মুদ্রা সংগ্রহ কেউ মিন্ট মার্ক অথবা কেউ ইতিহাসের সময়কাল ধরে করে থাকেন। বিশেষ করে যারা বিদেশ ভ্রমণে যান, ভ্রমণের পর, অবশিষ্ট বৈদেশিক অর্থ মানি এক্সচেঞ্জের অফিসে পরিবর্তন করে থাকেন। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে লক্ষ্য করা যায়, প্রাচীন সময়ে বৈদেশিক অর্থ বিনিময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা রূপে পরিচিত ছিল। বিশেষ করে মধ্যযুগে যখন নতুন নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার হতে থাকে তখন সেই সব ভূখন্ডের সম্পদের প্রতি মানুষের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদার জন্য ব্যাপকভাবে বাণিজ্য শুরু হয়, এবং মধ্যযুগের বাণিজ্যের দিক থেকে ভেনিস ছিল সকলের থেকে এগিয়ে, তাদের এক ধরনের বিশেষ মুদ্রা "ভেনেসিয়ান ডুকাট" ভারতেও প্রবেশ করেছিল ব্যাপক হারে। প্রধানত দক্ষিণ ভারতে এই ডুকাট খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। 2011 সালে তিরুবনন্তপুরমের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের যখন গুপ্ত ভল্ট গুলির একটি খোলা হয়েছিল, তখন সেখানে অন্যান্য ধন-সম্পদের সাথে ব্যাপকভাবে সোনার ডুকাট পাওয়া গিয়েছিল। মধ্যযুগে একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত ক্রুসেড চলেছিল, সেই সময় ইউরোপের ভাগ্যে একটি নাটকীয় পরিবর্তন দেখ...

এক ব্রিটিশ সমাধির অজানা গল্প

   আমরা যারা ইতিহাস চর্চা করি, 'লর্ড কর্নওয়ালিস' এই নামটির সাথে সকলেই বিশেষভাবে পরিচিত। ভারতের পবিত্র পূণ্য ক্ষেত্র বেনারস থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গাজীপুর, এই স্থানে ব্রিটিশ গর্ভনর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসের সমাধিটি অবস্থিত রয়েছে। ইতিহাস বলে কর্নওয়ালিস সাহেব আমেরিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার এই পরাজয় জীবনকে থামিয়ে দেয় নি বরং পরবর্তীতে ভারতে বহু যুদ্ধে জয়লাভ করতে সাহায্য করেছিল। অনেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে তিনি ব্রিটিশ সরকারের একজন শক্তিশালী প্রতিনিধি হতে পেরেছিলেন। ভারতের বেনারস বা বারাণসীতে তাঁর সমাধিটি লাড সাহাব বা লাত সাহাব বা লর্ড সাহাব কা মাকবারা নামে পরিচিত। আমেরিকাতে যুদ্ধে পরাজয়ের পর তিনি ভারতবর্ষে আসেন। ১৭৮৬ সালে ভারতে লর্ড কর্নওয়ালিস দ্বিতীয় গভর্নর জেনারেল এবং কমান্ডার-ইন-চীফ হিসেবে কর্মে যোগদান করেছিলেন। খুব দক্ষতা এবং কৌশলের মাধ্যমে তিনি ব্রিটিশদের সম্পর্কে ভারতবাসীর তীব্র ঘৃণাটাকে কিছুটা হলেও দূর করবার চেষ্টা করেছিলেন এবং নিজেকে একজন সফল গভর্নর ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত করবার চেষ্টায় ...

হারিয়ে যাওয়া কিছু গ্রন্থাগারের ইতিহাস

আমরা প্রাচীন যুগ থেকেই বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি এবং তার ই তাগিদে প্রাচীন বিশ্বে বহু গ্রন্থাগার গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন সময়ে মানুষের উদ্যোগে গ্রন্থাগার গুলি পূর্ণতা পেয়েছিল। আজকে আমরা সেই সকল গ্রন্থাগার এবং তাদের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করব। 1. আশুরবানিপালের গ্রন্থাগার অ্যাসিরিয় সভ্যতায় রাজা আশুরবানিপালের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। নব্য-অ্যাসিরিয়ান সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন আশুরবানীপাল। খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত তার সময়কাল ছিল বলে মনে করেন ঐতিহাসিকগণ, এবং তাঁকে আসিরীয়ার শেষ মহান রাজা হিসেবেও স্মরণ করা হয়ে থাকে। আশুরবানিপাল তার পিতা এসারহাদ্দনের পর উত্তরাধিকারী সূত্রে সিংহাসন লাভ করেছিলেন, তার ৩৮ বছরের রাজত্বকালে তিনি বহু যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং আসিরীয় সভ্যতায় এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। ৭ম শতাব্দীতে আশুরবানিপালের "রাজকীয় চিন্তাভাবনার" জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই প্রাচীন গ্রন্থাগার এবং গ্রন্থাগারটি আধুনিক দিনের ইরাকের নিনেভেতে অবস্থিত ছিল।প্রত্নতাত্ত্ব...