সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

স্বামীজীর ভাবনায় নীলাম্বরের বাগানবাড়ি

গঙ্গার দুই তীরে ছড়িয়ে থাকা রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের দুটি ঐতিহাসিক স্থান আজও শ্রদ্ধা ও স্মৃতিরক্ষার এক অনন্য নিদর্শন। পূর্ব তীরে কাশীপুর উদ্যানবাটী, যেখানে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর জীবনের শেষ ২৪৮ দিন অতিবাহিত করেছিলেন। অপর দিকে পশ্চিম তীরে অবস্থিত নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের বাগানবাড়ি, যা শ্রীরামকৃষ্ণোত্তর যুগে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। বর্তমানে ‘পুরনো মঠ’ নামে পরিচিত এই বাড়িটি জননী সারদাদেবী, ভগিনী নিবেদিতা ও স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি আগলে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। এখানেই বাস করে শ্রীমা সারদাদেবী আধ্যাত্মিক আনন্দ লাভ করেছিলেন, যা দেখে স্বামীজি ভবিষ্যতে বেলুড়ে শ্রীমায়ের জন্য স্থায়ী আবাস গড়ে তোলার সংকল্প করেছিলেন। রামকৃষ্ণ মঠ, কাশীপুর এই ঐতিহাসিক বাগানবাড়ির প্রাথমিক মালিক ছিলেন এক ইংরেজ, তবে ঊনবিংশ শতকের সত্তরের দশকে বিশিষ্ট আইনজীবী নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে এটি ভারতীয় মালিকানায় আসে। কলকাতার বিডন স্ট্রিটে বসবাসকারী নীলাম্বর ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের প্রধান বিচারপতি এবং পরে সে রাজ্যের রাজস্ব সচিব ও প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। প্রায় দুই দশক কাশ্মীরে কাটানোর পর তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ১৮৯৬ সালে কলক...

হর্নেডজিটেফের কফিন এবং আধুনিক বিজ্ঞান

  যখন আমি ব্রিটিশ মিউজিয়াম নিয়ে আলোচনা করি, তখন প্রথমেই আমার কৌতুহল ও আগ্রহের কেন্দ্র হয় সেখানে থাকা মমিগুলো। এখনো আমি মনে করি, প্রথমবার মিউজিয়ামে আসা বেশিরভাগ মানুষই সেখান থেকেই শুরু করে। তখন আমার কৌতূহলের বিষয় ছিল মমিগুলো নিজেই—মৃতদেহগুলোর সেই শিহরণ জাগানো, রহস্যময় এবং কিছুটা ভীতিকর উপস্থিতি। আজও যখন আমি ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে যাই কিংবা প্রধান সিঁড়ি বেয়ে উঠি, তখনও দেখি উচ্ছ্বসিত শিশুদের দল মিশরীয় গ্যালারির দিকে ছুটে যাচ্ছে, যেন তারা মমিদের রহস্য আর ভয়ের মুখোমুখি হতে চায়। তবে এখন আমার আগ্রহের বিষয় মমির কফিনগুলো। যদিও এটি মিউজিয়ামের প্রাচীনতম বস্তু নয়, তবে ইতিহাসের যাত্রা শুরু করার জন্য এটি বেশ উপযুক্ত। আমি এখান থেকে আজ আলোচনা শুরু করছি কারণ মমি এবং তাদের কফিন আজও মিউজিয়ামের অন্যতম আকর্ষণীয় নিদর্শন। এগুলো দেখায় ইতিহাসের এই অনুসন্ধান কীভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলবে—এবং কখনো কখনো সেসব প্রশ্নের উত্তরও দেবে। আমি বিশেষভাবে এই মমির কফিনটি বেছে নিয়েছি, যা খ্রিস্টপূর্ব ২৪০ সালের দিকে এক উচ্চপদস্থ মিশরীয় পুরোহিত, হর্নেডজিটেফের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এটি মিউজিয়ামের অন্যতম চমকপ্...

অমরাবতীর সন্ধানে

ভারতবর্ষের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের পালনাড়ু জেলায় কৃষ্ণা নদীর তীরে অমরাবতী গ্রাম অবস্থিত এবং এখানে একটি প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপের অবশেষ লক্ষ্য করা যা বর্তমানে এই গ্রামের নামেই পরিচিত। ঐতিহাসিকদের মতে অমরাবতী স্তূপের নির্মাণকার্য মৌর্য যুগে সম্রাট অশোকের আমলে শুরু হয় এবং পরবর্তী সময়ে সাতবাহন শাসকদের আমলে এই স্তূপের রূপ পরিবর্ধিত ভাবে নির্মিত হয়েছিল।  রমাপ্রসাদ চন্দ ১৯২৫ সালে ‘এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিয়া’তে তাঁর প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই প্রত্নক্ষেত্র উৎখননের সময় প্রাপ্ত ৫৮টি লেখের কথা উল্লেখ করেন। তিনি তারিখ বিহীন উৎসর্গকৃত এই লেখগুলির অক্ষরের ধরন ও ভাষার বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই স্তূপের সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতক পর্যন্ত।   বিপুল সংখ্যক মৌর্য আমলের রূপোর ছাপাঙ্কিত মুদ্রা ও একটি ভগ্ন স্তম্ভলেখ অমরাবতী থেকে পাওয়া গিয়েছিল এবং এর থেকে ঐতিহাসিকরা মনে করেন এই স্তূপের নির্মাণ মৌর্য যুগের গোড়ার দিকে হয়েছিল । তবে নিম্ন কৃষ্ণা উপত্যকায় মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর এই অঞ্চল সদ বংশীয় শাসকদের অধীনে আসে, বিভিন্ন লেখ ও মুদ্রা থেকে এই বংশের পাঁচজন...

টমাস সাহেবের গপ্পো

  জুতো হল এমন একটি বস্তু যার মাধ্যমে মানুষের পা আরাম ও রক্ষা পেয়ে থাকে। তবে সময়ের সাথে সাথে জুতোও ফ্যাশনের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। কিছু জুতো প্রবল নিরাপত্তার সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে স্টিল-টো বুট উল্লেখযোগ্য , এই জুতো শিল্প কারখানায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে আবার কিছু বুট বিশেষভাবে পর্বতারোহণ বা স্কিইং- এর জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে। এই সকল জুতোগুলি ছাড়া, দৈনন্দিন জুতোগুলিকে ও প্রায়শই বিভিন্ন ডিজাইনে বিকশিত হতে দেখা যায়, যেমন হাই হিল জুতো, যা সাধারণত অভিনব অনুষ্ঠানে মহিলাদের দ্বারা পরিধান করতে দেখা যায়। বর্তমানে বিখ্যাত ডিজাইনারদের দ্বারা তৈরি  জুতোগুলি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যয়বহুল উপকরনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়ে থাকে। প্রাচীন সময় থেকে ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন জুতো চামড়া, কাঠ বা ক্যানভাসের মাধ্যমে তৈরি হয়ে এসেছে, তবে বর্তমান সময়ে রাবার, প্লাস্টিক এবং অন্যান্য পেট্রোকেমিক্যাল থেকে প্রাপ্ত উপকরণ থেকেও জুতো তৈরি করা হচ্ছে। তবে ইতিহাস বলছে, বিশ্বের প্রাচীনতম জুতোগুলি হল:- সেজব্রাশ বার্কের স্যান্ডেল যা আনুমানিক ৭০০০ বা ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের, যা ১৯৩৮ সালে...

এক তান্ত্রিক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর গল্প

বৌদ্ধধর্ম বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম এবং এই ধর্মের অনুসারী সংখ্যা ৫২০ কোটির বেশি, বৌদ্ধধর্ম মূলত সিদ্ধার্থ গৌতমের মৌলিক শিক্ষা ও এর ব্যাখ্যাকৃত দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই ধর্ম খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ ও ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রাচীন ভারতে উৎপত্তিলাভ করে এবং এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বৌদ্ধধর্মের তিনটি প্রধান বিদ্যমান শাখা সাধারণত পণ্ডিতদের দ্বারা স্বীকৃত যথা: থেরবাদ বা হীনযান, মহাযান ও বজ্রযান তবে বৌদ্ধ চিন্তাধারাগুলোতে  মোক্ষলাভের উপায়ের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের আপেক্ষিক গুরুত্ব ও ধর্মসম্মতি এবং  নির্দিষ্ট শিক্ষা ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। গৌতম বুদ্ধের চার আর্যসত্য অনুসারে বৌদ্ধধর্মের লক্ষ্য হল তৃষ্ণা বা আসক্তি ও অবিদ্যার ফলে উদ্ভূত দুঃখ কে নিরসন করা। তবে আজকে আমরা গৌতম বুদ্ধকে নয়, আলোচনা করব অতীশ দীপঙ্কর কে নিয়ে। যুগ শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ পণ্ডিত এবং দার্শনিকের মধ্যে অন্যতম অতীশ দীপঙ্কর, কল্যাণশ্রী ও প্রভাবতী দেবীর পুত্র, পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুর জেলার অন্তর্গত বজ্রযোগিনী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্ম ও মৃত্যু তারিখ নিয়ে...

চৈতন্য যুগের শিল্পকলার বিবর্তন

আমরা জানি প্রত্যেক জনজাতির ধর্ম ও বিশ্বাসের মধ্যে অন্তর্নিহিত থাকে সেই জনজাতির প্রকৃত সত্তা। উদাহরণ হিসেবে যদি আমরা বিশ্বকর্মা পুজোর কথা আলোচনা করি তাহলে লক্ষ্য করা যাবে, বাঙালির শিল্প ও বিকাশের দিকটিতে এই পুজো ইঙ্গিতবাহী এবং বাঙালির বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক ভিত্তি। তবে, শিল্প বলতে যে কলকারখানা বোঝায় এমনটা নয় এর বাইরেও আর একটা শিল্প আছে। সেই শিল্পকে ইংরেজিতে বলে আর্ট এবং ধ্রুপদী বাংলায় অভিহিত করা হয় “কলা” নামে। প্রাচীন বাংলায় শিল্পকলা মে অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল তার প্রমাণ আমরা সমগ্র বাংলার বিভিন্ন অংশে লক্ষ্য করতে পারি। তার উদাহরণ সহযোগে এবার আমরা চৈতন্য যুগে বাংলার শিল্পকলা সম্পর্কে আলোচনা করব। ষড়ভুজ রুপে চৈতন্যদেব আমরা সকলেই জানি, মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির একজন হলেন চৈতন্যদেব। চৈতন্যদেবের আবির্ভাব থেকে অন্তর্ধান পর্যন্ত সময়কাল ১৪৮৬ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৫৩৩ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত। এই সময়কালটি সকল বাঙালির জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার ইতিহাসে লক্ষ্য করা যায় মধ্যযুগে, বিশেষ করে সেন যুগের পতনের পরে বাংলায় চরম ভাবে বৈদিক বর্ণবাদ এতটাই মাথাচাড়া দিয়েছিল যে, সেই সময় এর প্রভাবে প্রত্যেক বা...